নিজস্ব,প্রতিনিধি,শ্রীরামপুর- ধর্মের ভেদাভেদ কে হার মানিয়েছে শ্রীরামপুরে আনোয়ার। তাই রক্তের সম্পর্ক না হলেও পাতানো বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করলেন হিন্দুশাস্ত্র মেনেই। বিরল এই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন প্রতিবেশীরা। শ্রীরামপুরের দে স্ট্রীটের বাসিন্দা ছিলেন সুজিত হালদার,পেশায় দিল্লির ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী সুজিত বাবুর মৃত্যু হয় মার্চের শেষ সপ্তাহে।
বিবাহসূত্রে একমাত্র মেয়ে চৈতালি বাগ থাকেন সুদূর সাইপ্রাসে। বাবার মৃত্যুর খবর পেলেও সেইসময় আসা সম্ভব হয়ে ওঠেনি তাই সুজিত বাবুর দীর্ঘদিনের অসুস্থতায় পাশে থাকা আনোয়ারই সুজিত বাবুর ইচ্ছামত মুখাগ্নি করেছিলেন। কারন ক্যানসার-আক্রান্ত সুজিত হালদারকে চিকিৎসার প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন আনোয়ার, সেই সূত্রে পিতা পুত্রের সম্পর্ক হয়ে গেছিল, তাই তার মৃত্যুর পর প্রাথমিক অবস্থায় আনোয়ারের কিন্তু থাকলেও সুজিত বাবুর স্ত্রীর কথাতেই সে মুখাগ্নি করেন, শুধু তাই নয় হিন্দু শাস্ত্র মেনে গত কয়েক দিন সমস্ত রকম নিয়ম পালন করে সোমবার মস্তক-মুণ্ডন করে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারনে শ্রাদ্ধাদির কাজ শেষে করেন তারপর একইভাবে মঙ্গলবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের বাকি কাজ শেষ করলেন আনোয়ার।
শ্রীরামপুর টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা পেশায় মার্বেল মিস্ত্রি আনোয়ার আলি জানান একজন অসুস্থ মানুষকে দিনের-পর-দিন চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যেতে গিয়ে কখন পিতা পুত্রের সম্পর্ক হয়ে যায় বুঝতে পারিনি স্বাভাবিকভাবেই তার শেষ ইচ্ছাকে না করতে পারিনি তাই এই সিদ্ধান্ত,এক্ষেত্রে আমার পরিবারের থেকেও সমস্যা হয়নি।
এই ধরনের কাজে সকলে এগিয়ে এলে সমাজ আরো সুন্দর হয়ে উঠবে। সুজিত বাবু স্ত্রী শিপ্রা দেবী জানান স্বামীর অসুস্থর সময় আনোয়ারই হয়ে উঠেছিল আমার একমাত্র ভরসা, স্বাভাবিকভাবেই ওর ভূমিকায় আমরা মুগ্ধ। জাত, ধর্মের ভেদাভেদ নিয়ে যখন সমাজে তৈরি হয়ে বিভেদ সেই সময় আনোয়ারের এই ভূমিকায় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলো শ্রীরামপুর এলাকায়।
Views: 3072