কিভাবে সতর্ক থাকবেন, তারই আলোকপাত করলেন বিশিষ্ঠ চিকিৎসক প্রদীপ কুমার দাস
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউের সংক্রমণের দাপটে এ রাজ্য সহ মহারাষ্ট্র, গুজরাত, বেঙ্গালুরু, দিল্লী ও ভারতবর্ষের অনেক রাজ্যগুলিও বেসামাল হয়ে পড়েছে। সংক্রমণের দাপট নিম্নমুখী হলেও মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। অনেক জায়গায় গণদাহ বা কবর দিয়ে করোনা আক্রান্তদের শবদেহ সৎকার করা হচ্ছে। এই অবস্হার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে থাবা বসাতে এগিয়ে আসছে কালো ফ্যাংগাসের সংক্রমণ। ইতিমধ্যে কালো ফ্যাংগাস বা মিউকোররোমাইকোসিস করোনা কবলিত রাজ্যগুলো যেমন মহারাষ্ট্র, দিল্লী, গুজরাত,রাজস্হান,হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালুরু,বাংলা তে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশ ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। কেননা এরফলে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যাচ্ছে। গেছে।এদের কেস ইতিহাস থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে বেশিরভাগই কোভিড সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার ১২থেকে ১৫দিনের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছেন ব্ল্যাক ফ্যংগাসে।
সূত্রপাত-মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফ্যাংগাসের আর এক নাম জাইগোমাইকোসিস। এরা এক ধরণের ছত্রাক বাহিত বিরল অসুখ। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এদের প্রকোপ নেই বললেই চলে। তবে যাঁরা মধুমেহ, এইডস, লিমফোমা, ক্যান্সার কিংবা কোভিড রোগে আক্রান্ত তাঁদের ক্ষেত্রে এই ধরণের ছত্রাক সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। এছাড়া অঙ্গ প্রতিস্হাপন, কিডনির অসুখ, বহুদিন ধরে স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন অথবা অপুষ্টিতে ভুগছেন কিংবা যাঁদের কোন কারণে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে তাঁদের ক্ষেত্রে ওই ধরণের ছত্রাক সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের প্রায়শই অতি মাত্রায় স্টেরোয়েড ও ইমিয়ুনোসাপ্রেসেন্ট জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। সেই কারণে ব্ল্যাক ফ্যাংগাসের অতি সক্রিয়তা বাড়ার ঘটনা লক্ষিত হয়েছে।
বাসস্হান-এই ছত্রাকগুলোর স্বাভাবিক বাসস্হান হলো মৃত্তিকা, গাছপালা, পচা ফল ও শাকসবজী, জৈব-অজৈব সার ভান্ডারে। এরা সুযোগ সন্ধানী। কোন কারণে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই এরা সক্রিয় হয়ে ঢুকে পড়ে মুখ-গহ্বরে, নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে নাসা গহ্বরে, সাইনাস ক্যাভিটিতে, ফুসফুসে, মস্তিষ্কে, ম্যাক্সিলায়, চক্ষুকোটরে,পাচকনালী ও চামড়ায়। ওইসব অঙ্গের কোষ-কলায় প্রবেশ করে দ্রুত বংশবৃদ্ধির মারফৎ আশ্রয়দাতার কোষ-কলাকে ধ্বংস করতে শুরু করে দেয়। তবে এরা সংক্রামক নয়। অর্থাৎ এক দেহ থেকে অন্য দেহে বিস্তার লাভ করে না।
উপসর্গ-জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, চোখের পেছনে ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নাক বুজে যাওয়া, নাক থেকে কালো পুঁজের মতন রক্তক্ষরণ, চোয়ালে ব্যথা, দাঁতে ব্যথা, মুখ ফুলে যাওয়া, নাকের উপর কালো দাগ, চোখে কম দেখা কিংবা দুটো করে কোন জিনিস দেখা, চামড়ায় লালচে দাগ ও ফুলে যাওয়া, বুকে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয় এই সংক্রমণের প্রভাবে।
ঝুঁকিপূর্ণ কারা- অতি উচ্চ ব্লাড সুগারে যাঁরা ভুগছেন ও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বহুদিন ধরে যাঁদের আইসিইউ -তে চিকিৎসা চলছে, করোনা আক্রান্তদের যাঁদের উচ্চ মাত্রায় স্টেরোয়েড ওষুধ দেওয়া হচ্ছে এইসব রোগীদের কালো ফ্যাংগাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি।
সণাক্তকরণ- নাকের রস, চোখের জল বা সাইনাস থেকে রস সংরক্ষণ করে কালচার মিডিয়ায় ফ্যাংখাসের বংশবৃদ্ধি করে সণাক্তকরণ করা যায়। এছাড়া আক্রান্ত কোষকলা থেকে ট্যিসু বায়োপসি মারফৎ সংগ্রহ করে রোগ ধরা যেতে পারে।
জটিলতা-অন্ধত্ব, ফুসফুস ও মস্তিষ্ক কোষ-কলায় তঞ্চন ঘটানো ও স্নায়ুবিক বৈকল্য, মানসিক অস্হিরতা ও বৈকল্য
চিকিৎসা– সিসটেমিক এ্যাম্ফোটারিসিন-বি ৪-৬ সপ্তাহ। হাইপারবারিক অক্সিজেন অর্থাৎ উচ্চচাপে অক্সিজেন দেওয়া, শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে রূগ্ন ও মৃতপ্রায় কোষ-কলাকে সরিয়ে দিয়ে অন্যান্য সুস্হ কোষ-কলা সহ অঙ্গ-প্রতঙ্গকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করা।
ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে গেলে করণীয়- কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের নিরন্তর পর্যবেক্ষণ ও তাঁদের ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা। তাঁদেরকে যথাযথ মাত্রায় স্টেরোয়েড ওষুধ দেওয়া ও গভীরভাবে মনিটার করা। অক্সিজেন প্রয়োগের সময়ে পরিষ্কার জল ব্যবহার করা ও নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বদলে ফেলা। আক্রান্ত হলে দেরি না করে এ্যান্টি ফ্যাংগাল ওষুধ ব্যবহার করা।কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও রোগীদের ব্লাড সুগার সহ অন্যান্য প্যারামিটার নিয়মিত পরীক্ষা করা।
সর্তকতা- ধুলো-বালি রয়েছে এমন জায়গায় মুখাবরণ ব্যবহার করা। বাগানে কাজ করার সময়ে ফুলহাতা জামা, ফুল ট্রাউজার, হাতে ফুল গ্লাভস ও পায়ে ঢাউস জুতো পরা দরকার। সব সময় কাজের জায়গা, পড়ার টেবিল, চিকিৎসার জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন।
Views: 226